রাধাগােবিন্দ কর
রাধাগােবিন্দ কর (১৮৫২-১৯১৮) : হেয়ার স্কুল থেকে প্রবেশিকা পরীক্ষা পাশ করার পর ইনি চিকিৎসাবিজ্ঞান শিক্ষার জন্য মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। মেডিকেল কলেজে তিন বছরের শিক্ষাক্রম শেষ করে তিনি ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ড যান। এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমআরসিপি ডিপ্লোমা গ্রহণ করে এক বছর বাদে তিনি দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফিরে শ্যামবাজারে নিজ বাড়িতে ডাক্তার কর চিকিৎসাব্যাবসা শুরু করেন।
১৮৯৭ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় প্রথমবার প্লেগ রােগ দেখা দিলে ডাক্তার কর পল্লিবাসীদের মঙ্গলের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম এবং যথেষ্ট সময় ব্যয় করেন। প্রফুল্লচন্দ্র রায়কেতাঁর জাতীয় প্রতিষ্ঠান বেঙ্গল কেমিক্যালে প্রস্তুত ওষুধ বাজারে চালু করার ব্যাপারে ডাক্তার অমূল্যচরণ বসু এবং ডাক্তার রাধাগােবিন্দ কর সর্বতােভাবে সাহায্য করেন। পিতা দুগাদাস কর এবং আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র প্রমুখ বন্ধুর অনুপ্রেরণায় দেশীয় ভাষায় চিকিৎসাশাস্ত্র অধ্যয়ন ও অধ্যাপনার সড়ক নিমাণই ছিল তাঁর প্রধান স্বপ্ন ও জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। বেলগাছিয়া আলবার্ট ভিক্টর কলেজ ও হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে তার এই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়। তার মৃত্যুর পর এই কলেজের নাম হয় আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ।
জেনে নিন – পদার্থ বিজ্ঞান এর বিভিন্ন সুত্র
জীবদ্দশায় কিংবদন্তী এই চিকিৎসককে নিজের সর্বস্বদান করার পরেও এই দেশীয় চিকিৎসা-প্রতিষ্ঠান নির্মাণের দুঃসাহসী ব্রত পালনের জন্য প্রায় দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করতে হয়েছিল। বিদ্যাসাগরের মতাে মানুষও তাকে এত বড়াে ঝুঁকি না নিয়ে সরকারি দাক্ষিণ্য আদায়ের পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি তার বসতবাটিতে একটি দাতব্য চিকিৎসালয় প্রতিষ্ঠার জন্য যথাসর্বস্ব দান করে গিয়েছিলেন।
মাতৃভাষায় চিকিৎসাবিজ্ঞান চর্চা ছিল রাধাগােবিন্দ করের একান্ত স্বপ্ন। মেডিকেল স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি অবসর সময়ে একের পর এক বাংলা ভাষায় চিকিৎসাবিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়ে পুস্তক প্রণয়ন করেছেন। তাঁর লেখা একটি বইয়ের ভূমিকায় তিনি লিখেছেন—বাল্যকাল হইতে আমার বিশ্বাস বন্ধমূল হইয়াছে যে, দেশে শিক্ষাবিস্তার করিতে হইলে মাতৃভাষার আশ্রয় লওয়া ভিন্ন উপায় নাই। এই বিশ্বাসে নির্ভর করিয়া আমার স্বল্প বিদ্যা ও ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে যতদূর সাধ্য তাহার সমাধানে ত্রুটি করি নাই।
করপ্রেস স্থাপনে, কারমাইকেল কলেজ (পরবর্তীকালে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল) প্রতিষ্ঠায় তাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখিত। তার রচিত উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ ‘ধাত্রীসহায়’, “অ্যানাটমি’, “সংক্ষিপ্ত ভেষজতত্ত্ব’, সংক্ষিপ্ত শিশ ও বালক চিকিৎসা’, ‘স্ত্রীরােগ চিকিৎসা প্রভৃতি। সোর্স – পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ (বাংলা ভাষা ও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির ইতিহাস)
You must be logged in to post a comment.