মহেন্দ্রলাল সরকার
মহেন্দ্রলাল সরকার (১৮৩৩-১৯০৪) : ভারতে সুশৃঙ্খল প্রাতিষ্ঠানিক বিজ্ঞানচর্চার পথিকৃৎ মহেন্দ্রলাল সরকারের মূল্যায়ন প্রসঙ্গে শিবনাথ শাস্ত্রী তাঁর রামতনু লাহিড়ী ও তৎকালীন বঙ্গসমাজ গ্রন্থে মন্তব্য করেছেন : বঙ্গদেশকে যত লােক লােকচক্ষে উঁচু করিয়া তুলিয়াছেন এবং শিক্ষিত বাল্গালীদিগের মনে মনুষ্যত্বের আকাঙ্ক্ষা প্রদীপ্ত করিয়াছেন, তাহাদের মধ্যে ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকার একজন অগ্রগণ্য ব্যক্তি। এরূপ বিমল সত্যানুরাগ অতি অল্প লােকের মনে দেখিতে পাওয়া যায়, এরূপ সাহস ও দৃঢ়চিত্ততা অতি অল্প বাঙ্গালীই দেখাইতে পারিয়াছেন, এবপ জ্ঞানানুরাগ এই বল্গদেশে দুর্লভ।
হিন্দু কলেজের শিক্ষা সমাপ্ত করার পর কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৮৬১ সালে আইএমএস ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৬৩ সালে এই প্রতিষ্ঠান থেকেই তিনি এম ডি (ডক্টর অব মেডিসিন) ডিগ্রি লাভ করেন।
শৈশবে হেয়ার স্কুলে পড়ার সুবাদে শিক্ষাব্রতী হেয়ার সাহেবের জীবনাদর্শ তাঁকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে। এম ডি ডিগ্রি পাবার পর থেকেই ডাক্তার সরকার প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেন এবং তার অসামান্য রােগ নির্ণয় ও নিরাময়ের ক্ষমতার খ্যাতি ভারতবর্ষের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মহেন্দ্রলালের অন্যতম গুণগ্রাহী ছিলেন, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের কর্কট ব্যাধির চিকিৎসার জন্য শিষ্য ও ভক্তরা তাঁরই শরণাপন্ন হয়েছিলেন। জীবনের প্রাথমিক পর্বে হােমিওপ্যাথি সম্পর্কে তাঁর অনাস্থার প্রধান কারণ ছিল ওই পদ্ধতিতে অ্যানাটমি এবং ফিজিওলজির তেমন গুরুত্ব না থাকা। কিন্তু হােমিওপ্যাথি চিকিৎসক লােকনাথ মৈত্র, রাজেন্দ্রলাল দত্ত, তার বন্ধু কিশােরীৰ্চাদ মিত্র এবং স্বয়ং বিদ্যাসাগরের প্রভাব ও প্রেরণায় নিজের চিকিৎসার ধারা পাল্টে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে বিশ্বের অন্যতম সেরা হােমিওপ্যাথি বিশেষজ্ঞ হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন মহেন্দ্রলাল সরকার।
তার শ্রেষ্ঠ কীর্তি হল ইন্ডিয়ান অ্যাসােসিয়েশন ফর দ্য কালটিভেশন অফ সায়েন্স প্রতিষ্ঠা। নিজের স্মৃতিকথায় আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় সমকালের সেরা ছাত্রদের মধ্য বিজ্ঞনচর্চারস্পৃহা জাগিয়ে তােলার ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানেরগুরুত্বের কথা জানিয়েছেন।
আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু, ডাক্তার স্যার নীলরতন সরকার, ডক্টর শ্যামাপ্রসাদ মুখােপাধ্যায়, ডক্টর স্যার রাজেন্দ্রনাথ মুখােপাধ্যায় প্রমুখ বিশিষ্ট ব্যক্তি এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরবর্তীকালে এই প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকারের মৃত্যুর পর এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তাঁরই সুযােগ্য ভাইপাে ডাক্তার অমৃতলাল সরকার। তার সময়েও এই প্রতিষ্ঠানের প্রভূত উন্নতি লক্ষ করা যায়। প্রতিষ্ঠানটি যাদবপুরে অবস্থিত। তাঁর পরামর্শে সরকার বিবাহ-বিধি প্রণয়নে (Marriage Act III of 1872) মেয়েদের বিবাহের ন্যূনতম ১৬ বছর নিধারণ করেন। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। সেখানে আসামের চা-শ্রমিকদের দুরবস্থা সম্বন্ধে প্রস্তাব নেওয়া হয়। সোর্স – পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ (বাংলা ভাষা ও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির ইতিহাস)
You must be logged in to post a comment.