নীলরতন সরকার

নীলরতন সরকার

নীলরতন সরকার (১৮৬১-১৯৪৩) : জয়নগর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিক এবং ক্যাম্বেল মেডিক্যাল স্কুল থেকেডাক্তারির প্রাথমিক পরীক্ষায় পাশ করে সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট সার্জেনের চাকরি পাওয়ার পরেও জ্ঞান পিপাসু নীলরতন মেট্রোপলিটন স্কুল থেকে এফএ এবং বি এপাশ করেন। কিছুদিন চাতরা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষকের চাকরি কারর পর মেডিক্যাল কলেজে ফিরে এসে ১৮৮৮ সালে এবং পরের বছরেই একসঙ্গে এম এ ও এম ডি পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হন। এই সময় থেকেই তাঁরপ্রাইভেট প্র্যাকটিসে সাফল্যের সূত্রপাত। ১৮৯৩ সালেইকলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলাে নির্বাচিত হন, ১৯১৭ থেকে ১৯১৯ পর্যন্তআসীন ছিলেন উপাচার্য পদেও। ১৯২৪ থেকে ১৯২৮ পর্যন্ত স্নাতকোত্তর কলা বিভাগ এবং ১৯২৮ থেকেঅবশিষ্টজীবন স্নাতকোত্তর বিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি ছিলেন। ১৯২০ সালে বিশেষ শিক্ষা মিশনের সদস্য মনােনীত হয়ে ইযােবােপে গেলে অক্সফোর্ড কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় সফর চলা কালীনই তাঁকে ডি সি এল এবং এল এল ডি উপাধি প্রদান করে। তিনি ডাক্তার সুরেশপ্রসাদ সর্বাধিকারীর সঙ্গে যৌথভাবে কলিকাতা মেডিক্যাল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। বেলগাছিয়া আলবার্ট ভিক্টর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের (পরবর্তীকালে কারমাইকেল, বর্তমানে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ) প্রতিষ্ঠায় ডাক্তার রাধাগােবিন্দ করের অন্যতম সহায় ছিলেন তিনি। পাশ্চাত্য শিক্ষায় উচ্চশিক্ষিত চিকিৎসকদের গ্রামে গিয়ে পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে তার অনুপ্রেরণা ছিল উল্লেখযােগ্য। চিত্তরঞ্জন সেবা প্রতিষ্ঠান ও যাদবপুরে অবস্থিত কুমুদশঙ্বররায় যক্ষ্মা হাসপাতালের সভাপতি এবং ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসােসিয়েশনের মুখপত্রের সম্পাদকের দায়িত্ব সামলেছেন বহুদিন। তিনি ১৯১২ থেকে ১৯২৭ পর্যন্ত বঙ্গীয় ব্যবস্থাপক সভাৱ সদস্য ছিলেন।

চিকিৎসক হিসেবে তার খ্যাতির কারণে দেশীয় শিল্পোদ্যোগী হিসাবে তার অগ্রণী ভূমিকা অনেকটাই কম আলােচিত। এদেশে তিনিই প্রথম বিজ্ঞানসম্মত দূষণমুক্ত ট্যানারি এবং সার ও সাবানের কারখানা স্থাপন করেন। রাঙগামাটি চা কোম্পানি (পরবর্তীকালের ইস্টার্ন টি কোম্পানি) গঠনে তার ভূমিকা বিশেষভাবে স্মরণীয়। তিনি বসু বিজ্ঞান মন্দির, বিশ্বভারতী ও ভারতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি ছিলেন। জাতীয় শিক্ষা পরিষদের সভাপতি সম্পাদক হিসাবে বহু যুবককে শিল্পস্থাপনের প্রয়ােজনীয় বুনিয়াদি শিক্ষা নিতে অনুপ্রাণিত করেছিলেন তিনি। তিনি আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের অভিন্নহৃদয় সুহুদ ছিলেন।

তারই প্রচেষ্টায় বেঙ্গল টেকনিক্যাল স্কুল, যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া ক্যালকাটা মেডিকেল ক্লাবের তিনি প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তাঁর উল্লেখযােগ্য গবেষণা ‘সিরােসিস অব লিভার ইন চিলড্রেন।

তাঁর ছাত্রদের মধ্যে ডা. বিধানচন্দ্র রায় সবচেয়ে যশস্বী হন। আমাদের দেশে সিরাম, ভ্যাকসিন এবং অন্যান্য জৈব উপাদান বিদেশ থেকে আমদানি করতে হত। ১৯১৯ সালে ডা. কৈলাসচন্দ্র বসু এবং ডা. বিধানচন্দ্র রায়ের সহযােগিতায় বেঙ্গল ইমিউনিটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে ২৫০ রকমের ওষুধ তৈরি হত। কলকাতায় ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসােসিয়েশন পত্রিকা তিনি দক্ষতার সঙ্গে বারাে বছরসম্পাদনা করেন। এই পত্রিকায় জনস্বাস্থ্যের সমস্ত দিক নিয়েসবিস্তারে আলােচনা হত। সাধারণ ব্রাহ্মসমাজের সক্রিয় সদস্য হিসাবে বহু সামাজিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন এই যশস্বী চিকিৎসক। ব্যক্তিগত চিকিৎসক হিসাবে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের অত্যন্ত আস্থাভাজন ছিলেন ডা. নীলরতন সরকার।

জেনে নিন – পদার্থ বিজ্ঞান এর বিভিন্ন সুত্র

সোর্স – পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ (বাংলা ভাষা ও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির ইতিহাস)

Comments (1)


  1. মহেন্দ্রলাল সরকার – Bonga Bazar

    […] ডাক্তার মহেন্দ্রলাল সরকারের মৃত্যুর পর এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তাঁরই সুযােগ্য ভাইপাে ডাক্তার অমৃতলাল সরকার। তার সময়েও এই প্রতিষ্ঠানের প্রভূত উন্নতি লক্ষ করা যায়। প্রতিষ্ঠানটি যাদবপুরে অবস্থিত। তাঁর পরামর্শে সরকার বিবাহ-বিধি প্রণয়নে (Marriage Act III of 1872) মেয়েদের বিবাহের ন্যূনতম ১৬ বছর নিধারণ করেন। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। সেখানে আসামের চা-শ্রমিকদের দুরবস্থা সম্বন্ধে প্রস্তাব নেওয়া হয়। […]

leave your comment

Top