কাদম্বিনী বসু গঙ্গোপাধ্যায়

কাদম্বিনী বসু গঙ্গোপাধ্যায়

কাদম্বিনী (বসু) গঙ্গোপাধ্যায় (১৮৬১-১৯২৩) : বাবা ব্রজকিশাের বসু ভাগলপুর স্কুলের হেডমাস্টার ছিলেন। তিনি ছিলেন ব্রাহ্ম। ভাগলপুরে ভারতের প্রথম মহিলা সমিতির মহিলা প্রতিষ্ঠাতা ও নারীশিক্ষায় নিবেদিতপ্রাণ ব্রজকিশাের কাদপ্বিনীকে পাঠান বালিগঞ্জের হিন্দুমহিলা বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে। স্কুলটি পরেবঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়ের সঙ্গে মিশে যায়। এই স্কুলটিও ১৮৭৮ সালে বেথুন স্কুলের সঙ্গে মিশে যায়। এশিয়ার প্রথম সরকার-স্বীকৃত বালিকা বিদ্যালয় এই বেথুন স্কুল। কাদম্বিনী বেথুন স্কুল থেকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন (১৮৭৮)। ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে তিনি এফ এ পাশকরেন।

দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়, আনন্দমােহন বসু, দুগামােহন দাস, শিবনাথ শাস্ত্রী প্রমুখের আন্দোলনের ফলে ১৮৭৮ সালের ২৭ এপ্রিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট নারীর জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি লাভের দাবি মেনে নেয় এবং ১৮৮২ সালে কাদম্বিনী বসু ও চন্দ্রমুখী বসু প্রথম মহিলা স্নাতক হন। মেডিক্যাল কলেজে ভর্তির আগেই কাদম্বিনী দ্বারকানাথ গঙ্গােপাধ্যায়কে বিবাহ করেন।

কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায় মেডিক্যাল কলেজে প্রবেশ করার সম্ভাবনা তৈরি হওয়ার পর থেকে ডাক্তারি পড়া শুরু করা পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ের খবর সরকারি মুখপত্র এডুকেশন গেজেটে প্রকাশিত হয়েছিল। স্নাতক হওয়ার পর চন্দ্রমুখী গেলেন এম এ পড়তে। কিন্তু সকলকে অবাক করে দিয়ে নিজের শিক্ষক দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়ের প্রেরণায় কাদম্বিনী গেলেন ডাক্তারি পড়তে, সেকালের প্রেক্ষিতে যে কথা চিন্তা করাটাই কার্যত অসম্ভব ছিল। কিন্তু উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের শ্রেষ্ঠ র্যাডিক্যাল, স্ত্রীশিক্ষাব্রতী, অবলাবান্ধব পত্রিকার সম্পাদক অদম্য দ্বারকানাথ ও কাদম্বিনীর অক্লান্ত প্রয়াসে মেয়েদের জন্য চিকিৎসাবিদ্যা চর্চার দরজা খুলে গেল এবং এই দুর্গম পথের প্রথম মশালবাহিকা হলেন কাদস্বিনী। তিনি ১৮৮৪ সালে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের প্রথম ছাত্রী হিসেবে ভর্তি হন।

কিন্তু অন্তিম পরীক্ষার সময় মেডিসিনের অধ্যাপক ডা. রাজেন্দ্রচন্দ্র চন্দ্র প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষার সময় ১ নম্বর কম দিয়ে কাদম্বিনীকে ফেল করিয়ে দিলেন। আবার লড়াই চলল। শেষ অবধি প্রিন্সিপাল সাহেবের সার্টিফিকেট পেয়েকাদম্বিনী অ্যালােপ্যাথি ডাক্তার হলেন। অধ্যক্ষ প্রদত্ত ‘Graduate of Bengal Medical College’ সার্টিফিকেট লাভ করে চিকিৎসক হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে লেডি ডাফরিন হাসপাতালের চিকিৎসকরূপে নিযুক্ত হন।

১৮৯২ সালে তিনি বিলেতে যান এবং সেখান থেকে এলআরসিপি(LRCP) এডিনবরা, এলআরসিএস (LRCS), গ্লাসগাে ও জিএফপিএস (GFPS) ডাবলিন উপাধি নিয়ে স্বদেশে ফেরেন। তিনিই হলেন বিলিতি ডিগ্রিধারী প্রথম ভারতীয় মহিলা চিকিৎসক যিনি ভারতে ফিরে এসে চিকিৎসার কাজ শুরু করেন।

একটি সরকারি অনুসন্ধান কমিটির সদস্যা হিসেবে কাদম্বিনী ও তার শৈশব-সঙ্গিনী কবি কামিনী রায় মহিলা শ্রমিকদের দুর্দশা সরেজমিনে তদন্ত করে দেখার জন্যে বিহার ও ওডিশায় যান। আরও বহু সামাজিক কাজকর্মের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ডা. কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়। ১৮৯৫ খ্রিস্টাব্দে রাজমাতার চিকিৎসার্থে নেপালে যান। সেখানে এই মহৎপ্রাণ মানবীর হাত ধরে আধুনিক জনচিকিৎসার সূত্রপাত হয়।সোর্স – পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ (বাংলা ভাষা ও শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতির ইতিহাস)

leave your comment

Top