এক বৃদ্ধা ও এক লােভী চিকিৎসক
এক বৃদ্ধা ও এক লােভী চিকিৎসক: সংকেত-সূত্র : এক বৃদ্ধা চোখে দেখতেন না—চিকিৎসকের সঙ্গে চুক্তি হল—সারাতে পারলে পুরস্কার। অন্ধত্বের সুযােগে চিকিৎসক বৃদ্ধার আসবাবপত্র সরালেন। দৃষ্টি ফিরে পেলে পুরস্কার দাবি—অনাদায়ে মামলা। বৃদ্ধার যুক্তি-অন্ধ অবস্থায় কিছু দেখতেন না, এখনও ঘরের কিছু দেখছেন না। চোখ সেরেছে কি? বিচারক বুঝলেন।
এক বৃদ্ধা ও এক লােভী চিকিৎসক
করুণাময়ী দেবী বল্লভপুরের এই বিশাল বাড়িতে একা থাকেন। পুরােনাে জমিদার আমলের বিশাল বাড়ি। দামি আসবাবপত্রে ঠাসা। করুণাময়ী দেবীর বয়স এখন পঁচাত্তর। বয়স হলেও তার স্বাস্থ্য মােটামুটি ভালােই। কিন্তু তাঁকে বেকায়দায় ফেলে দিয়েছে তাঁর চোখ দুটো। গত একবছর ধরে তিনি চোখে কিছুই দেখছেন না। নিজেকে তিনি এখন অন্ধই ভেবে নিয়েছেন।
বৃদ্ধা একদিন খবর পেলেন, বল্লভপুরে একজন ভালাে চক্ষু-চিকিৎসক এসেছেন— ড. শিশির মজুমদার। করুণাময়ী দেবী একদিন শিশিরবাবুকে বাড়িতে এনে তার চোখের বিষয়ে বললেন। ডাক্তার তার চোখ দুটি পরীক্ষা করে দেখে বললেন, সেরে যাবে, তবে একটু দের হবে। বৃদ্ধার মনে আশার আলাে জ্বলে উঠল। তিনি শিশিরবাবুর হাত দুটি ধরে বললেন, ডাক্তারবাবু, আমার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিন, আমি আপনাকে অনেক টাকা পুরস্কার দেব।
এটিও পড়ুন – জাতিপুঞ্জের সাফল্যের কিছু দিক উল্লেখ করাে।
বৃদ্ধার ঘরের দামি আসবাবপত্রগুলাের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছিলেন শিশিরবাবু। কী সুন্দর সব চেয়ার, টেবিল, সােফা, খাট, আলমারি। হঠাৎ পুরস্কারের কথায় সন্বিৎ ফিরে পেলেন তিনি। মনে মনে কীসব হিসাব কষে নিয়ে বললেন, পুরস্কার ? আপনার চোখ সারিয়ে দিতে পারলে কত টাকা পুরস্কার দেবেন?
বৃদ্ধ বললেন, পঞ্চাশ হাজার।
হিসেবি মানুষ শিশিরবাবু বললেন, তাহলে একটা চুক্তি হওয়া দরকার।
সেইদিনই উকিল ডেকে চুক্তি করা হল, বৃদ্ধার দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে পারলে ডাক্তার শিশির মজুমদার পঞ্চাশ হাজার টাকা পুরস্কার পাবেন।
ডাক্তারবাবু রােজই বৃদ্ধার বাড়িতে এসে চোখের চিকিৎসা করেন। আর বৃদ্ধার অন্ধহের সুযােগে তাঁর দামি আসবাবপত্রগুলি একটি দুটি করে সরাতে থাকেন। দেখতে দেখতে বৃধার সমস্ত আসবাবপত্র চলে গেল ডাক্তারবাবুর বাড়িতে।
একদিন করুণাময়ী দেবী সত্যি সত্যিই দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেলেন। কিন্তু দেখতে পেলেন না। তাঁর দামি আসবাবপত্রের একটিও। এসব যে ডাক্তারেরই কাণ্ড তা তিনি সহজেই বুঝে ফেললেন। শর্ত অনুযায়ী ডাক্তারবাবু পুরস্কার দাবি করলে বৃদ্ধ তা দিতে অস্বীকার করলেন।। ক্ষুধ ডাক্তারবাবু মামলা করলেন করুণাময়ী দেবীর নামে।
বিচারকের সামনে হাজির হতে হল করুণাময়ী দেবীকে। বিচারক তার কাছে জানতে চাইলেন, দৃষ্টিশক্তি ফিরে পাওয়া সত্ত্বেও তিনি চুক্তি অনুযায়ী পুরস্কারের টাকা ডাক্তারবাবুকে দিচ্ছেন না কেন? বৃদ্ধা সবিনয়ে জানালেন, ধর্মাবতার, আমার চোখ কী সত্যিই উনি সারিয়ে দিতে পেরেছেন? আমি যখন অন্ধ ছিলাম তখন আমার ঘরের দামি আসবাবপত্রগুলি দেখতে পেতাম না। এখনও সেগুলিকে দেখতে পাচ্ছি না। তাহলে আমার চোখ সারল কোথায়?
বিচক্ষণ বিচারক বৃদ্ধার কথার ইঙ্গিত ও যুক্তি বুঝতে পারলেন। মহানুভব বিচারকের চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত ফাঁস হয়ে গেল ডাক্তারবাবুর অপকীর্তি।
You must be logged in to post a comment.