আত্মঘাতী গল্প রচনা – নির্মিত

আত্মঘাতী গল্প রচনা – নির্মিত

আত্মঘাতী গল্প রচনাঃ এই পোষ্টে আত্মঘাতী গল্প রচনা শেয়ার করা হল। নিম্নে গল্পের সংকেত সূত্র দেওয়া হল। [ জীবনের হিসাব গল্প ]

সংকেত-সূত্র: ঝুনবুনওয়ালা শহরের ধনী ব্যবসায়ীকিন্তু সে এক সময়ে নিঃসম্বল ছিল—সে এখন তেল-ঘি-মশলা ও ওষুধের ব্যাবসা করে—তার বিশাল প্রাসাদ, গাড়ি, লােক-লঙ্করএকদিন তার অসুখ করে—ডাক্তার ইনজেকশন দেয়—ইনজেকশন কোন কোম্পানির জানতে চায়—সেটা তারই নিজের কারখানায় তৈরি জেনে নির্বাক রােগীর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে।

আত্মঘাতী

কলকাতা শহরের প্রথম দশজন ধনীর মধ্যে ঝুনঝুনওয়ালা একজন। অথচ একদিন সে ছিল সহায়-সম্বলহীন। ছােটবেলায় আকস্মিকভাবে মৃত্যু হয় তার বাবা-মায়ের। কিছুদিন পরে তার দাদা তাকে তাড়িয়ে দেয় বাড়ি থেকে। বালক ঝুনঝুনওয়ালা তার কর্মজীবন শুরু করে একটি ছােট রেস্তোরাঁর বয় হিসেবে। কিন্তু এই কাজ তার ভালাে লাগত না। তার ইচ্ছে হত স্বাধীনভাবে কিছু একটা করার। কিছুদিনের মধ্যেই রেস্তোরাঁর কাজ ছেড়ে দিয়ে সে রাস্তার মােড়ে দাঁড়িয়ে চানাচুর বিক্রি করতে শুরু করে। কয়েক মাস যেতে না যেতেই সে বুঝতে পারে, ব্যাবসা যতই ছােট হােক তার মজাই আলাদা।

চানাচুর বিক্রি করতে করতেই তার বেশ কিছু পয়সা জমে যায়। ছােট্ট একটা দোকান করে সে। সেখানে বিক্রি হত তেল, ঘি আর মশলা। সেইসঙ্গে আরও কিছু নিত্যপ্রয়ােজনীয় জিনিস। তার দোকানের তেল-ঘি-মশলার বেশ চাহিদা দেখা দেয়। কারণ এখানে পাওয়া যেত নির্ভেজাল জিনিস। কয়েক বছরের মধ্যে ঝুনঝুনওয়ালার ব্যাবসা বেশ বড় হয়ে ওঠে। এবার সে নিজেই নেমে পড়ে উৎপাদনের কাজে। অল্পদিনের মধ্যেই অসম্ভব সাফল্যলাভ করে সে। তেল-ঘি-

মশলার বিশাল ব্যাবসার সঙ্গে সে শুরু করে ওষুধের ব্যাবসাও। রাশি রাশি অর্থের মালিক হয়ে ওঠে ঝুনঝুনওয়ালা।

পয়সার স্বাদ বড় আজব জিনিস। অর্থের তৃয়া শুধু বেড়েই যায়। ঝুনঝুনওয়ালার মধ্যেও জেগে উঠল তীব্র অর্থপিপাসা। আরও টাকা চাই, আরও টাকা, আরও, আরও। আরও টাকার জন্য ব্যাবসাতে লাভের পরিমাণ বাড়াতে হবে আরও। আরও লাভের জন্য শুধু সৎপথে ব্যাবসা করলে চলবে না। একটু বাকা পথে যেতে হবে। ঝুনঝুনওয়ালা ভেজাল মেশাতে শুরু করল তেল-ঘি-মশলাতে। তারপর একসময় তার কারখানা থেকে ভেজাল ওযুধও তৈরি হতে শুরু করল।

নামে, বেনামে ঝুনঝুনওয়ালার অর্থের পরিমাণ এখন কত, তা কেউ বলতে পারে না। এই শহরে তার বাড়িটা দেখবার মতাে। বাড়ি না বলে এটিকে প্রাসাদ বলাই ভালাে। প্রাসাদতুল্য এই বাড়িতে চাকরবাকরের সংখ্যাও প্রচুর। ভারতবর্ষের সবকটি বড় শহরেই তার বাড়ি আছে। প্রতি বছর নতুন গাড়ি কেনা তার শখ। কোটি কোটি টাকার মালিক এই মানুষটিই একদিন ছিল নিঃসম্বল।

একদিন সন্ধ্যায় ঝুনঝুনওয়ালা অসুস্থ হয়ে পড়ে। বুকে অসহ্য যন্ত্রণা। সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তার আসেন। ডাক্তারবাবু রােগীর লক্ষণ দেখেই একটি ইনজেকশন দেন। ইনজেকশন দেওয়ার পরে পরেই কেমন যেন নেতিয়ে পড়ে ঝুনঝুনওয়ালা। কথা জড়িয়ে যায়। তার মনের মধ্যে হঠাৎ একটা সংশয় জাগে। সে জড়ানাে গলায় ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করে, এই ইনজেকশনটা কোন্ কোম্পানির তৈরি?

ডাক্তারবাবু বেশ উৎসাহের সঙ্গে জানালেন, এ তাে আপনার কোম্পানিরই জিনিস!

সঙ্গে সঙ্গে ঝুনঝুনওয়ালার চোখ-মুখের চেহারা পালটে গেল। আতঙ্ক আর যন্ত্রণা- মেশানাে গলায় অস্পষ্টভাবে বলল, অ্যা, আমার কোম্পানির জিনিস? সর্বনাশ!

বুনঝুনওয়ালা ডাক্তারকে আরও কী যেন বলতে গেল। কিন্তু পারল না। কণ্ঠ রুদ্ধ হয়ে এল। শিথিল হয়ে এল শরীর। নির্বাক রােগীর চোখের কোণ বেয়ে শুধু কয়েক ফোটা জল গড়িয়ে পড়ল।

leave your comment

Top